স্বদেশ ডেস্ক:
বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং নদ-নদীর পানি কমায় দেশের প্রায় সব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও তার ক্ষত রয়ে গেছে। দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। বন্যার পানিতে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনা ও জমে থাকা পানি থেকে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে অনেক এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে।
আমাদের ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা আরও জানান-
সিলেট : বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি কমেছে। তবে বন্যার পানি কমলেও রেখে গেছে ক্ষত। অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে। কয়েকদিন ধরে বাড়িঘর ডুবে থাকার পর জেগে উঠলেও এখনো শুকায়নি। অনেক পরিবার এখনো রান্না করতে পারছে না। ফলে খাদ্য সংকটে ভুগছে তারা।
সিলেটে বন্যাক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে সকল শ্রেণির মানুষ। স্কুলশিক্ষার্থী থেকে প্রবাসী, স্বেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠন থেকে শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সবাই যুক্ত হয়েছেন বানভাসি মানুষের দুর্দশা লাঘবে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের মতো বাহিনীও বিতরণ করছে ত্রাণ। উদ্ধার তৎপরতা সীমিত রেখে সেনাবাহিনীও এখন গুরুত্ব দিচ্ছে মানুষের কাছে একবেলার খাবার পৌঁছে দিতে।
সুনামগঞ্জ : জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। শহরের প্রধান রাস্তাঘাট পানির নিচ থেকে জেগে উঠছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমার পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার
নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সুনামগঞ্জ শহরে বন্যার পানিতে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনা ও জমে থাকা পানি থেকে শহরের বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে। সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বলেন, শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না হচ্ছে ততদিন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হবিগঞ্জ : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরকারি হিসাবে জেলার সাত উপজেলার ৫৪টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার একশ ৯০জন পানিবন্দি রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৩শ ৩০জন।
কুড়িগ্রাম : সব কটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো বিপদসীমার ৫ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৪৫০ চর ও দ্বীপচর এখনো পানির নিচে রয়েছে। নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মানুষজন বাঁধ, রাস্তা ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্য সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বগুড়া : যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে বগুড়ায়। গতকাল শুক্রবার পানি কিছুটা কমে এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিক বৃদ্ধি পাচ্ছে বাঙালি নদীর পানি। বন্যার কারণে অনেক এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার প্রায় ৮৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বন্যার পানিতে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
জামালপুর : বৃষ্টি না হওয়ায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নামতে শুরু করেছে পানি। যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার কমলেও শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি কমতে থাকায় বন্যার্তদের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন। বন্যায় সরকারি হিসাবে জামালপুরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এক সপ্তাহ ধরে পাঁচটি উপজেলার ১৫৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত। অথচ এখনো বেশির ভাগ গ্রামে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি।
মানিকগঞ্জ : পদ্মা ও যমুনার পানি কমলেও জেলার অভ্যন্তরীণ কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কালীগঙ্গা নদীর তরা পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ সেন্টিমিটার। এর ফলে ওই নদীতীরবর্তী নতুন নতুন নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : গোমতী নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। পানি কমায় বানভাসিরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। শুক্রবার দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুরামপুর ও গঙ্গানগর ঘুরে দেখা গেছে বানভাসিদের দুর্ভোগের চিত্র। বেশিরভাগ ঘরের মাটির চুলা স্যাঁতস্যাঁতে। কেউ কেউ নতুন করে মাটির চুলা বানাচ্ছেন। আবার কেউ ঘর মেরামত করছেন।